সূহুর করার বিধান কি ?
যে কোন রোজা রাখার জন্য শেষ রাত্রে খাবার গ্রহণ করার নাম সূহুর ( سُحور ) এবং খাবারটিকে সাহুর ( سَحور ) বলা হয় । হাদিস সমূহে এভাবেই এসেছে ।
বাংলাদেশে প্রচলিত ভুল শব্দটি হলো “ সেহরী !” যা’ অর্থগতভাবে এ জায়গায় বড় হাস্যকর ! যুগ যুগ ধরে এ প্রচলন জারি রয়েছে ! আরো বড় হাস্যকর হয়ে উঠে যখন অজ্ঞ জনগোষ্টির দেখাদেখিতে শিক্ষিত লোকেরাও সেহরী বলে থাকেন ! এ যেনো জাহালাতকে হালাল করার অপচেষ্টা !
মনে রাখতে হবে যে, ভুল ইজ ভুল । সত্য লুকিয়ে থাকলেও মিথ্যা বৈধ হয়ে যায়না । আমাদের গ্রামে এক ব্যক্তির নাম আব্দুস সাত্তার । তাকে সবাই ডাকে “ চুইল্লে !” এ নামে না ডেকে তার আসল নাম ধরে খোঁজ করতে গেলে কেয়ামত পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে ! তাই বলে কি “ চুইল্লে “ শব্দটি সঠিক হয়ে গেলো ? কখনোই নয় ।
মহানবী সাঃ বলেছেন “ যে ব্যক্তি রোজা রাখার নিয়ত করলো, সে যেনো যে কোন কিছু দ্বারা সূহুর করে ।”
মুসনাদে আহমদ ১৪৯৫০
ছহীহুল জামে ৬০০৫
ইব্নে আবি শায়বা ৯০০৯
আবু ইয়া’লা ২০৮৮
সিলসিলাহ ছহীহা ২৩০৯
মহানবী সাঃ বলেছেন ….
تسَحروا فان في السُحور بركة
“ তোমরা সূহুর করো । এখান বরকত নিহিত ।”
ছহীহুল বোখারি ১৯২৩
ছহীহ মুসলিম ১০৯৫
মহানবী সাঃ বলেছেন “ সূহুরের জন্য উত্তম হলো খেজুর ।”
সুনানে আবু দাউদ ২৩৪৫
শায়খ আলবানী রহঃ হাদিসটিকে ছহীহ বলেছেন ।
মহানবী সাঃ বলেছেন “ কাউকে কমপক্ষে একটু পানি হলেও সূহুর করতে দিও । ফিরিশ্তারা সাহুর দানকারী লোকদের জন্য দোয়া করে থাকেন ।”
মুসনাদে আহমদ ১১০০৩
ছহীহুল জামে ৩৬৮৩
মহানবী সাঃ বলেছেন সূহুরের সময়সীমা ফজরের আযান হওয়ার পূর্বে ৫০টি আয়াত তেলাওয়াত করা পর্যন্ত ।”
ছহীহুল বোখারি ১৯২১
ছহীহ মুসলিম ১০৯৭
এখানে বলা হয়েছে যে, ফজরের আযান পর্যন্ত ৫০ টি আয়াত তেলাওয়াত করার জন্য যেইটুকু সময়ের প্রয়োজন ওটাই সূহুরের সময় । অর্থাৎ তিনি দেরীতে সূহুর করার জন্য উৎসাহিত করেছেন । যেনো দিনের বেলায় রোজাদার অধিক ক্লান্ত না হয়ে পড়ে ।
মহানবী সাঃ বলেছেন “ সমস্ত নবী/ রসুলগণ আঃ দেরীতে সূহুর করতেন এবং তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন ।
ছহীহুল জামে ২২৮৬
ইব্নে হিব্বান ১৭৭০
তাবরানী ১১/৭. ১০৮৫১
تخريج العواصم و القواصم ١١/٣
الطيالسي ٢٧٧٦
সাহাবীগণ রাঃ দেরীতে সূহুর করতেন এবং তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন ।
ফাতহুল বারী ৪/১৯৯
مصنف عبد الرزاق ٤/٢٢٦
তাবরানী
ফজরের আযান শুরু হওয়া পর্যন্ত সূহুর করা বৈধ । আযান শুরু হয়ে গেলে খাওয়া বন্ধ করতে হবে ।
দলীলঃ সূরা আল বাক্বারা ১৮৭
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাস রাঃ বলেন “ আল্লাহপাক তোমাদের জন্য সুবহে সাদেক নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত খাবার - পানীয় হালাল করে দিয়েছেন ।
رواه عبد الرزاق في المصنف
ফজর এখনো উদিত হয়নি মনে করে খেয়ে ফেললে রোজা ভাঙ্গবেনা ।”
ফতহুল বারী ১৬১/৪
মহানবী সাঃ বলেছেন “ ইব্নে উম্মে মাকতুম আযান দেয়া পর্যন্ত তোমরা খাবার- পানীয় গ্রহণ করতে পারবে । তিনি ফজরের আযানের মোয়াজ্জিন ছিলেন ।”
ছহীহুল বোখারি ৬১৭
অনেকে নিজেদের সুবিধার্তে এবং সকালে কাজ থাকার কারণে রাত ১১/১২ টায় সূহুর করে ফেলেন । আবার অনেকে সম্পূর্ণ না খেয়ে রোজা রেখে দেন । এমন অবস্থায় মনে মনে রোজার নিয়ত থাকলে রোজা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে । তবে সময়মত সূহুর না করাটা সুন্নত পরিপন্হী হবে । বরকত থাকবেনা ।


0 মন্তব্যসমূহ