ইফতারের পূর্বে ও পরে পঠনীয় দুআ





প্রশ্ন: ইফতার করার পূর্বে ও পরে কোন দুআ পাঠ করতে হয়?

.

উত্তর: 

❑  ইফতারের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ' পাঠ করা সুন্নত:

.

 ইফতার সহ যে কোনও খাবার বা পানীয় গ্রহণের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ' (আল্লাহর নামে শুরু করছি) পাঠ করা সুন্নত। 

.

হাদিসে এসেছে, মা আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

.

إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ، فَإِنْ نَسِيَ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ

.

“তোমাদের কেউ যখন খাওয়া শুরু করে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহ (অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি) আর যদি, শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলে: “বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী” (অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে) [সুনানে আবু দাউদ-হিসনুল মুসলিম]

অন্য বর্ণনায় এসেছে:

بِسْمِ اللَّه أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ

উচ্চারণ: "বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু"(আবু দাউদ)

অর্থ: শুর ও শেষে আল্লাহর নামে।

.

.

❑  ইফতারের সময় "আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ..." পাঠ করার হাদিস দুর্বল:

اللَّهُمَّ لَكَ صُمتُ وعلَى رزقِكَ أفطَرتُ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আ'লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।”

এ হাদিসটি অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে দুর্বল। নিম্নে এ বিষয়ে কয়েকজন মুহাদ্দিসগণের অভিমত পেশ করা হল:

 ✪ ইবনে হাজার আল আসক্বালানি বলেন, إسناده ضعيف" এর সনদ দুর্বল। [আত তালখিসুল হাবির ২/৮০২]

✪ ইবনুল কাইয়েম বলেন, لا يثبت "এ হাদিসটি সাব্যস্ত নয়।" [যাদুল মাআদ: ২/৪৯]

✪ শাওকানি বলেন, إسناده ضعيف এর সনদ দুর্বল। [নাইলুল আওত্বার-৪/৩০১]

✪ শাইখ আলবানি বলেন, এটি দুর্বল। [যাইফ আবু দাউদ, হা/২৩৫৮]

.

.

যদিও কোনও কোনও আলেম বলেন, এর সনদ শাওয়াহেদ (বা একাধিক সাক্ষ্য হাদিস) দ্বারা শক্তিশালী হয়। যেমনটি আব্দুল কাদের আরনাবুত ইমাম নওবীর 'আল আযকার' গ্রন্থের তাহকিক গ্রন্থে এ কথা বলেছেন। তবে জইফ হওয়ার পক্ষেই অধিকাংশ আলেমের অভিমত। 

.

সুতরাং কেউ যদি 'বিসমিল্লাহ' পড়ার পর এ দুআটি পাঠ করে তাহলে তাকে বিদআত বলা যাবে না। তবে 'বিসমিল্লাহ' পাঠের হাদিসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হওয়ায় তাই যথেষ্ট।

❑  ইফতারের পর নিম্নোক্ত দুআটি পড়া সুন্নত:

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন:

 "ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ"

উচ্চারণ: "যাহাবায যামাউ ওয়াব তাল্লাতিল উরূক্বু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।"

অর্থ: “তৃষ্ণা দূর হয়েছে; শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে ইনশাআল্লাহ”। [সুনানে আবু দাউদ, আলবানি রহ. হাদিসটিকে সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থ (২০৬৬) ‘হাসান’ বলেছেন] 

শাইখ উসাইমিন রাহ. বলেন, "এ দুআটি ইফতারের পরে পাঠযোগ্য। কেননা এগুলো (পিপাসা দূর হওয়া, শিরাগুলো সিক্ত হওয়া) ইফতারের পর ছাড়া হয় না।" [আল-লিকা আশ শাহরি” নম্বর- ৮]

আল্লাহু আলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ