এটা আল্লাহ, যিনি ত্রুটিমুক্ত, সর্বোচ্চ তাঁর অস্তিত্বের সত্যায়ন। অহংকারের পথ অবলম্বন ব্যতীত কেউ প্রকাশ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে নি। অন্যথায়, কোনো বিবেকবোধসম্পন্ন লোকের জন্য এটা দাবি করা অসম্ভব যে সৃষ্টিজগত দুর্ঘটনাবশত সৃষ্টি হয়েছে। অথবা এটা কোনো 'Cause' বা কারণ ছাড়াই অস্বিত্ব লাভ করেছে। এর কারণ সুস্থ বিবেকসম্পন্ন লোকদের ঐক্যমতে এটা একেবারেই অসম্ভব।
বরং, আল্লাহর অস্তিত্ব সকল প্রকার প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত। যেমনঃ
১. Rational বা যুক্তিভিত্তিক
২. ফিতরাত
৩. বিধিসম্মত
৪. অনুভূত এবং অর্জিত অভিজ্ঞতালব্ধ
এই চার ধরণের দলীল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ হলো, আমরা সৃষ্টিজগত এবং তার মাঝে যা ঘটছে তার অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করি, যা কোনো সৃষ্টির পক্ষে করা একেবারেই অসম্ভব। সৃষ্টিজগতের অস্তিত্ব, আকাশ, পৃথিবী এবং তাদের মাঝে যা আছে, নক্ষত্ররাজি, পর্বতমালা, নদী-নালা, গাছ-পালা, বাকসম্পন্ন ও বাকহীন আরো অনেক কিছু।
এই অস্তিত্বের সূচনা হলো কী করে?
১. এটা কি দুর্ঘটনাবশত ঘটে গেছে?
২. নাকি কোনো 'কারণ' ছাড়াই অস্তিত্বের সূচনা হয়েছে?
৩. নাকি নিজেই নিজেকে অস্তিত্বে এনেছে?
এগুলো হলো তিনটি সম্ভাবনা, যার দ্বারা বিবেক চতুর্থ কোনো সম্ভাবনা গ্রহণ করে না। এই প্রত্যেকটি সম্ভাবনাই অকার্যকর এবং মিথ্যা।
দুর্ঘটনাবশত সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে বলতে হয়, এটা এমন এক কথা, যা বাস্তবতা ও যুক্তি উভয়ের ভিত্তিতে বিবর্জিত। কারণ, আপনি আকস্মিকভাবে এত উন্নতমানের সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনতে পারবেন না। প্রত্যেকটি Effect বা ঘটনার জন্য Cause বা কারণ প্রয়োজন। উপরন্তু, সৃষ্টিজগতের অবাক করা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সামঞ্জস্য, যার মধ্যে কোনো সংঘর্ষ, ত্রুটি নেই তা প্রমাণ করে Randomly (এলোমেলোভাবে) এর অস্তিত্বে আসা অসম্ভব। কারণ, আকস্মিকভাবে সৃষ্ট কোনো বস্তুর বিকাশ সুশৃঙ্খল হবে না কারণ, তা তো আকস্মিক, দুর্ঘটনাবশে সৃষ্ট!
যদি সৃষ্টির স্বয়ংক্রিয় অস্তিত্ব লাভের কথা বলা হয়, তাহলে সেটাও অসম্ভব। কেননা, এর অস্তিত্বের আগে সৃষ্টির অস্তিত্ব ছিলো না। এটা Nothing ছিলো, অর্থাৎ কিছুই না। এবং, Nothing অনস্তিত্বশীল কিছুকে অস্তিত্বে আনতে পারে না।
তৃতীয় সম্ভাবনা অনুযায়ী সৃষ্টিজগত কোনো কারণ ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে, এটিও প্রথম সম্ভাবনার মতোই, যেটা অনুযায়ী সৃষ্টিজগত আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। আগেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা অসম্ভব।
এটা বলতেই হবে, এ সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্বে এনেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা, যিনি সুউচ্চ, সুমহান। তিনি বলেন -
"তারা কি কোনো কিছু ছাড়াই সৃষ্টি হয়ে গেছে? নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা? তারা কি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে না!" [সূরা তূর, ৩৫-৩৬]
এই সৃষ্টিজগত যুক্তিগতভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
আল্লাহর অস্তিত্বের ফিতরাতি প্রমাণ হলো এমন এক দলীল, যার কোনো প্রমাণ লাগে না। কারণ, মানুষ তাঁর রবের প্রতি বিশ্বাসের সহজাত প্রকৃতি
"প্রত্যেকটি শিশুই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। তারপর, তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খ্রিষ্টান বা জরথ্রুষ্ট বানায়।"
[সহীহ বুখারী, খণ্ড ২, হাদীস ৪৬৭]
একারণে ঘটনাক্রমে মানুষের জীবনে এমন কিছু আপতিত হয়, যাতে মনে হয় সে ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন সে চিন্তা না করে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে - 'হে আল্লাহ!' 'হে রব!' বা এমন কিছু। এটা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মানুষ এর সহজাত প্রকৃতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অস্তিত্বের উপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল্লাহর অস্তিত্বের অভিজ্ঞতালব্ধ এবং অনুভূত জ্ঞানের অন্যতম হলো আমরা দেখতে পাই তিনি আমাদের দু'আ কবুল করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। অনেকে আছে যারা আল্লাহকে এভাবে ডেকেছে - "হে রব!" এবং দেখুন! চোখের পলকে সে সারা পেয়েছে। নিশ্চয়ই, কুরআনে এ ব্যাপারে অনেক উদাহরণ আছে, যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী -
"স্মরণ করো আইয়্যুবের কথা! যখন তিনি তাঁর রবের নিকট কেঁদে বললেন - 'নিশ্চয়ই, দুর্ভোগ আমাকে আপতিত করেছে। নিশ্চয়ই, তুমি দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।' অতঃপর, আমরা তাঁর ডাকে সারা দিলাম এবং তাকে মুক্ত করলাম বিপদ থেকে।" [সূরা আম্বিয়া, ২১ঃ৮৩-৮৪]
আরো উল্লেখ্য, এ বিষয়ে সুন্নাহতে অনেক উদাহরণ আছে। তার মধ্যে একটি হাদীস আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত -
"একজন বেদুঈন জুমার দিন মসজিদে প্রবেশ করলো, তখন রাসূল খুতবা দিচ্ছিলেন। সে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, রাস্তা আটকে গেছে, আল্লাহর কাছে দু'আ করুন যাতে তিনি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তখন রাসূল হাত তুললেন এবং বললেন- 'হে আল্লাহ, আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন।' 'হে আল্লাহ, আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন।' আকাশ পুরোপুরি মেঘমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন ছিলো। রাসূল মিম্বার থেকে নামেন নি, যতক্ষণ না তাঁর দাড়ি ভিজে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছিলো। এক সপ্তাহ মুষলধারে বৃষ্টি হলো।
পরবর্তী শুক্রবারে সেই লোক আবার এসে বললো- হে আল্লাহর রাসূল! বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে, সম্পদ বন্যায় ভেসে যাচ্ছে, আল্লাহর কাছে দু'আ করুন, যাতে তিনি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করেন। তখন রাসূল হাত তুললেন এবং বলতে লাগলেন- হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে, আমাদের উপর নয়! তিনি অন্য কোনো দিকে তাকান নি, যতক্ষণ না আকাশ পরিচ্ছন্ন হলো। তখন লোকেরা রৌদ্রালোকে হাঁটতে শুরু করলো। [মুত্তাফাকুন আলাইহি, সহীহ বুখারী, খণ্ড ২, হাদীস ৫৫, সহীহ মুসলিম, খণ্ড ২, হাদীস ১৯৫৫]
অনেক দু'আ আছে যাতে বান্দা তার রবকে সাড়া দেওয়ার জন্য আহ্বান করে এবং তিনি সাড়া দেনও। এটি আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্বের একটি প্রমাণ যা অভিজ্ঞতালব্ধ এবং উপলব্ধি করতে হয়।
আল্লাহর অস্তিত্বের শরয়ী প্রমাণ অগণিত। সমস্ত কুরআন এবং সব সহীহ হাদীস আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। যেমনটা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন -
“যদি এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে নাযিল হতো, তাহলে তারা এতে প্রচুর অসামাঞ্জস্য খুঁজে পেতো।” [সূরা নিসা, ৪৪৮২]
ইংরেজি অনুবাদঃ ড. সালেহ আস সালেহ (রহিমাহুল্লাহ)
বাংলা অনুবাদঃ মাহাথির বিন আলী


0 মন্তব্যসমূহ