স্বর্ণ/ রৌপ্য ও টাকার যাকাত
*** স্বর্ণ ***
*** কারো কাছে এক বছর পর্যন্ত ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ জমা থাকলে, সে স্বর্ণের বর্তমান মূল্য ( বর্তমান মূল্য মানে পুরাতন স্বর্ণের বর্তমান মূল্য । নতুন স্বর্ণের মূল্য নয় ) নির্ধারণ করে ২.৫ পার্সেন্ট যাকাত দিতে হবে । চন্দ্র মাস অনুযায়ী বছর নির্ধারণ করা উচিত । ইংরেজী বর্ষ নয় । ৮৫ গ্রামের নিম্নে যাকাত আসবেনা । ৮৫ গ্রাম পূর্ণ হলে পুরো স্বর্ণটার উপর যাকাত আসবে । অত:পর ৮৫ গ্রাম থেকে যতো বাড়বে সবটার উপর যাকাত আসবেই । ৮৫ গ্রাম মানে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ । ব্যবহৃত স্বর্ণের উপর যাকাত দেয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে । উত্তম হলো সতর্কতা স্বরুপ ব্যবহৃত স্বর্ণের যাকাত দিয়ে দেয়া । অর্থাৎ অব্যবহৃত স্বর্ণের সাথে ব্যবহৃত স্বর্ণকে হিসেব করত: ৮৫ গ্রামে পৌঁছে গেলে যাকাত প্রদান করা ।
*** রৌপ্য ***
*** কারো কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা ৫৯৬ গ্রাম রৌপ্য এক বছর ধরে জমা থাকলে, সে রৌপ্যের উপর আড়াই পার্সেন্ট যাকাত প্রদান করা ফরজ ।
*** টাকা ***
*** সাধারণত রৌপ্যের মূল্যের ভিত্তিতে টাকার উপর যাকাত আরোপ করা হয়ে থাকে । আর তাই ৫৯৬ গ্রাম রৌপ্যের মূল্য ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে । সুতরাং কারো কাছে ৪০ হাজার টাকা এক বছর পর্যন্ত জমা থাকলে, আড়াই পার্সেন্ট যাকাত আদায় করতে হবে । ৪০ হাজার টাকার নিম্নে যাকাত আসবেনা । অবশ্য সেটা নির্ভর করছে বর্তমান বাজারের রৌপ্যের মূল্যের উপর ।
*** অবস্হা যদি এমন হয়, স্বর্ণ ৮৫ গ্রামের চেয়ে কম কিন্তু জমা টাকা সহ ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের সমমান হয়ে যায়, এমতাবস্হায় যাকাত প্রদান করা উত্তম হবে । অনুরুপভাবে স্বর্ণ/ রৌপ্য ও টাকা সবটাই মিলিয়ে যদি যাকাতের নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, যাকাত দিয়ে দেয়াটা উত্তম হবে । উত্তম এ কারণেই বললাম যে, এ মাসআলায় মতভেদ রয়েছে । আমি সতর্কতার দিকটাকে অগ্রাধিকার দিলাম । যেহেতু যাকাত না দেয়ার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ ও মারাত্মক ।
*** স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যের মাঝে আকাশ - পাতালের ব্যবধান । যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা স্বর্ণের মূল্যকে মানদন্ড করিনি । অন্যথায় তিন লাখ+ টাকার নিম্নে কারো উপর যাকাত ফরজ হবেনা ! ফলে টাকার যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে স্বর্ণের হিসাবকে অনুসরণ করতে গেলে অসংখ্য মানুষের টাকার উপর যাকাত ফরজ নাও হতে পারে ! এমতাবস্হায় যাকাত প্রদানকারীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে এবং অসহায় লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন । এমনিতেই বহু ধনী লোক যথাযথভাবে হিসেব করে যাকাত আদায় করেনা বলে অভিযোগ রয়েছে ! আর তাই আমরা টাকার যাকাত নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে রৌপ্যের হিসেবটাই সামনে এনেছি । রৌপ্যের মধ্যেও বিভিন্ন দামের রৌপ্য বাজারে বিদ্যমান । আমাদের অনুরোধ থাকবে যে, কম মূল্য রৌপ্যের হিসেবে হিসাব করত: টাকার যাকাত নির্ধারণ করুন । তাতে গরীবদের বড় উপকার হবে এবং একজন যাকাতদাতা বাড়বে । যা ইসলামকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে । মহানবী সা: বলেছেন
اليد العلي خير من اليد السفلي
ছহীহুল বোখারি ১৪২৭
ছহীহ মুসলিম ১০৩৪
সুনানে নাসাঈ ২৫৪৩
*** একজন প্রবাসী যদি বিদেশ থেকেই স্বর্ণ কিনে থাকেন, সে হিসেবেই হিসাব করবেন । যেহেতু বাংলাদেশ ও UAE ‘র স্বর্ণের মূল্য সমপর্যায়ের নয় । অনুরুপভাবে দিরহামকে দিরহাম হিসেবেই হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে । যে যেখানেই অবস্হান করে, সে হিসেবেই তার হিসাব । তবে যে টাকা আপনি দেশের ব্যাংকে পাঠিয়ে দিয়েছেন, সে টাকার যাকাতের হিসাব, দেশের হিসাবেই হবে । যেহেতু ওটা তখন আর দিরহামে নেই ! টাকায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে ।
*** ২২ ক্যারেট স্বর্ণের হিসাব ২২ ক্যারেটের মূল্য অনুযায়ী । একইভাবে ১৮/২৪ ক্যারেট স্বর্ণের হিসাবও সে অনুপাতে । অর্থাৎ আলাদাভাবে । এক ক্যাটাগরির স্বর্ণকে অন্য ক্যাটাগরির হিসাবে নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই ।


0 মন্তব্যসমূহ