রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ সমূহ !

রোজা  ভঙ্গ হওয়ার কারণ ও কাজা/ কাফফারা ইত্যাদি । 







১. জেনে শুনে ইচ্ছে করে খাওয়া বা পানাহার করা । এর জন্য কাজা দিতে হবে । কাফফারা নেই । 

হাম্বলী , শাফেয়ী মাযহাব । ইবনুল মুনজির এ মতটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন । শায়খ সালেহ উসাইমিন রহঃ এ মতটিকে গ্রহণ করেন । পক্ষান্তরে হানাফী ও মালেকি মাযহাবে কাফফারা দিতে হবে । 

২. ইচ্ছে করে বমি করা । এর জন্য কাজা দিতে হবে । অনিচ্ছা সত্ত্বেও বমি হলে রোজা ভাঙ্গবেনা । 

সুনানে তিরমিযি ৭২০

সুনানে ইব্নে মাজাহ ১৬৭৬

সুনানে আবু দাউদ ২৩৮০

زوائد المسند ١٠٤٦٣

সুনানে নাসাঈ ৩১৩০

৩. ঋতুস্রাব/ সন্তান প্রসব । ইফতারির ২ মিনিট পূর্বেও হয়ে থাকলে রোজা ভেঙ্গে যাবে । 

৪. জেনে শুনে স্ত্রী সহবাস করা । এ কাজটিকে অত্যন্ত ভয়ংকর বলা হয়েছে । এক দিন রোজার জন্য ২ মাস রোজা রাখতে হবে বিরতীহীনভাবে অথবা ৬০ জন মিসকিনদের খাবার দিতে হবে । একই দিনে একবার বা কয়েকবার সহবাস করা হলে কাফফারা একটি দিতে হবে । কাজাও দিতে হবে । পক্ষান্তরে কয়েকদিন বা ধারাবাহিকভাবে সহবাস করা হলে কাফফারার হিসাব আলাদা হবে । 

স্বামী - স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে সহবাস হয়ে থাকলে উভয়ের উপর কাফফারা আসবে । পক্ষান্তরে স্ত্রীর অসম্মতিতে তাঁর উপর ফোর্স করার কারণে যদি সহবাস হয়, এমতাবস্হায় স্ত্রীর উপর কাফফারা আসবেনা । কাজা দিতে হবে । স্বামীর উপর কাফফারা আসবে । 

৫. ইচ্ছাকৃতভাবে বির্য বের করা । পুরুষ - মহিলা যেই হোক না কেন । এ কাজটির জন্য রোজার কাজা দিতে হবে এবং তাওবা করা বাণ্চণীয় ।

৬. বলকারক ইন্জেকশান / স্যালাইন/ গ্লোকোজ গ্রহণ করা । 

 যে সব কারণে রোজা ভাঙ্গবেনা কিন্তু ছওয়াব কেটে দেয়া হবে এবং পূর্ণ ছওয়াব লাভ করবেনাঃ 

গীবত করা । মিথ্যা কথা বলা । চোগুলখোরি করা । মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া । গালমন্দ করা । অশ্লীল কথা বলা । 

মহানবী সাঃ বলেছেন “ রোজার দিনে কেউ যদি গালি দেয়, তাঁর জবাবে বলবে “ আমি রোজাদার ।”

ছহীহুল বোখারি ১৯০৪. ১৮৯৪

ছহীহ মুসলিম ১১৫১

সুনানে আবু দাউদ ২৩৬৩

সুনানে ইব্নে মাজাহ ১৬৯১

সুনানে নাসাঈ ২২১৬

মুসনাদে আহমদ ৭৪৮৪

البر المنير  ٥/٧٠٦

মহানবী সাঃ বলেছেন “ যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ত্যাগ করতে পারলোনা, খাবার - পানাহার থেকে বিরত থেকে কোন লাভ নেই ।”

ছহীহুল বোখারি ১৯০৩

رواه الطبرانى في الصغير و الاوسط 

সুনানে তিরমিযি ৭০৭

সুনানে আবু দাউদ ২৩৬২

সুনানে নাসাঈ ৩২৪৬

সুনানে ইব্নে মাজাহ ১৬৮৯

মুসনাদে আহমদ ১০৫৬২

সাইয়্যিদুনা জাবের রাঃ বলেন “ যদি রোজা রেখে থাকো, গুনাহ ও মিথ্যা থেকে চোখ, কান ও জিহ্বাকে বাঁচাও । কর্মচারী/ বুয়াদেরকে কষ্ট দিওনা । রোজার দিন আর অন্য মাসের দিনকে সমান করে ফেলবেনা ।”

رواه ابن شيبة في المصنف 

 যে সব কারণে রোজা ভাঙ্গবেনাঃ

১. রোজা অবস্থায় মিসওয়াক করা ।

رواه أحمد و علقه البخاري في الصحيح بصيغة الجزم 

رواه احمد و اهل السنن الاربعة 

رواه احمد و البخاري معلقا بصيغة الجزم و ابو داوود و ابن خزيمة

২. কুলি করা । তবে অতিরিক্ত করা যাবেনা । পেটের ভেতরে পানি ঢুকে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।

৩. গরমে অতিষ্ট হয়ে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালা বা গোসল করা । এ আমলটি রসুল সাঃ নিজেই করেছেন । 

شرح مسلم للنووي ١٥/١٥ 

৪. রাত্রে স্ত্রী সহবাস করতঃ গোসল না করা অবস্থায় সকাল হয়ে গেলে রোজা ভাঙ্গবেনা  । 

ছহীহুল বোখারি 

ছহীহ মুসলিম 

ইব্নে হিব্বান ৩৪৮৭

অনুরুপভাবে পিরিয়ড বা সন্তান প্রসবের রক্ত বন্ধ হওয়ার পর রাত্রে গোসল করা জরুরী নয় । রোজা রেখে সকালে গোসল করলে সমস্যা নেই ।

৫. হিজামা করলেও রোজা ভাঙ্গবেনা । 

ছহীহুল বোখারি 

সুনানে নাসাঈ

ইব্নে খোজাইমাহ

বাইহাক্বী

الدار قطني 

ابن شاهين في الناسخ و المنسوخ

فتح الباري  ١٧٤/٤

এ মতটি গ্রহণ করেছেন হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও জামহুর । 

পক্ষান্তরে হাম্বলী , শায়খুল ইসলাম ইব্নে তাইমীয়া রহঃ, শায়খ বিন বায রহঃ, শায়খ সালেহ উসাইমিন রহঃ এবং সৌদিয়ার ফতওয়া হলো রোজা ভেঙ্গে যাবে । 

দলীলঃ হিজামাকারীর রোজা ভেঙ্গে যাবে ।”

مختصر ارواء الغليل ١٧٩/١ 

তাঁরা বলেন হিজামা করলে রোজা না ভাঙ্গার হাদিসটি পরবর্তী সময়ে মানসূখ হয়েছে । 

আমার পরামর্শ হলো রোজা রাখা অবস্থায় হিজামা করা থেকে বিরত থাকা । যেহেতু নিজেকে খামাখা সমস্যায় ফেলানো উচিত হবেনা ।  

৬. তরকারীর লবন টেস্ট করলে রোজা ভাঙ্গবেনা । 

ছহীহুল বোখারি ৩/৩০

শায়খুল ইসলাম ইব্নে তাইমীয়া রহঃ বলেছেন “ বিনা কারণে লবন টেস্ট করা মাকরুহ তবে রোজা বহাল থাকবে ।” 

مجموع الفتاوى ٢٥/٢٢٦

৭. বির্য বের না হওয়া এবং সেক্সের আশংকা না থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দেয়ার কারণে রোজা ভাঙ্গবেনা ।

ছহীহুল বোখারি ১৯২৭. ১৯২৮

ছহীহ মুসলিম ১১০৬

সুনানে তিরমিযি ৭২৮

সুনানে আবু দাউদ ২৩৮২

সুনানে নাসাঈ ৩০৫৫

সুনানে ইব্নে মাজাহ ১৬৮৪

মুসনাদে আহমদ ২৪১৫৪

৮. আতর/ সুরমা/ Perfume / সিগ্রেট ও খাবারের সুগন্ধি দেহে প্রবেশ করলে রোজা ভাঙ্গবেনা । 

শায়খুল ইসলাম ইব্নে তাইমীয়া রহঃ । 

مجموع الفتاوى ٢٥/٢٢٧. ٢٤١-٢٤٢

ইমাম বোখারি রহঃ বলেন এলকোহলের গন্ধের কারণে রোজার কোন সমস্যা নেই । এটা সাইয়্যিদুনা আনাস বিন মালিক রাঃ ও ইমাম হাসান বসরী রহঃ’র অভিমত ।

ছহীহুল বোখারি ৩/৩০

৯. চোখে ও কানে ঔষধ দেয়া হলে রোজা ভাঙ্গবেনা । পক্ষান্তরে নাকে দেয়া হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে । 

১০. রক্ত প্রদানে রোজা ভাঙ্গবেনা । ইন্সুলিন / অক্সিজেন / দাঁতের রক্ত নির্গত হওয়া / দাঁত ফেলানো / পায়খানার পথে সাবসিডিয়ারী দেয়ার কারণে রোজা ভাঙ্গবেনা । 

১১. দিনে/ রাতে যখনই হোক না কেন স্বপ্নদোষের কারণে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা । 

 রোজা রাখা অবস্থায় ভুলবশতঃ খেয়ে ফেললে রোজা ভাঙ্গবেনা । 

ছহীহুল বোখারি ৬৬৬৯

ছহীহ মুসলিম ১১৫৫


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ